• ঢাকা
  • শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ২ ভাদ্র ১৪৩১, ১২ সফর ১৪৪৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


১৪ ফেব্রুয়ারি

রক্ত আর ঘামে ভেজা আন্দোলন


রাজেকুজ্জামান রতন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২, ০২:১৮ পিএম
রক্ত আর ঘামে ভেজা আন্দোলন

জীবনের চাইতে বড় কিছু নাই, এটা সবাই জানে, কিন্তু মানুষ কখন জীবনকে তুচ্ছ করত পারে? কখন একটা আদর্শকে কর্তব্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়? কখন নিজের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না করে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়কে প্রধান করে দেখতে পারে? যখন পারে তখন তা অসংখ্য মানুষকে শুধু সাহসী করে তা-ই ন๊য়, মানুষের মনে স্বপ্নের বীজ বপন করে দেয়।

এমনি অনেক সাহস আর স্বপ্নের দিন আছে আমাদের দেশে মৃত্যু আর নির্যাতনে অশ্রু আর বেদনায় ভরা সেসব দিন নয়, স্বপ্ন আর সাহসের বারুদে ঠাসা সেই সব দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক ফেরানোর মতো এমন অনেক ঘটনার ভিড়ে জ্বলজ্বল করছে একটি দিন, ১৪ ফেব্রুয়ারি, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। রক্ত, ঘাম আর অশ্রুতে মাখামাখি করে ✨যে স্বাধীনতা আমরা পেলাম, রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই, আমরা দেখলাম আমাদের স্বপ্নের মৃত্যু। শিক্ষার অধিকার, গণতন্ত্র আর শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কি অধরাই থেকে যাবে?

এই প্রশ্ন🉐 তাড়িয়ে বেড়িয়েছে আর তাতিয়ে তুলেছে ছাত্রদের প্রতিনিয়ত। এ রকম সময়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারি করেন এরশাদ। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছাত্ররা। অতী🔯তের সমস্ত স্বৈরশাসকের মতো স্বৈরাচারী এরশাদ তার দমন-নিপীড়নের স্টিম রোলার চালিয়ে দেয় ছাত্রদের ওপরে। একদিকে দমন, অন্যদিকে শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া, শিক্ষার বিষয়বস্তু পাল্টে দেওয়ার কাজ শুরু করে, প্রণয়ন করে মজিদ খানের শিক্ষা নীতি। যার মর্মবস্তু ছিল: শিক্ষার অধিকার সবাই পাবে না, উচ্চশিক্ষা হবে সীমিত এবং ৫০ শতাংশ আসন থাকবে তাদের জন্য যাদের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করা হবে, সাম্প্রদায়িক সিলেবাস প্রণীত হবে, শিক্ষাকে শিল্পে বিনিয়োগের মতো করে দেখতে হবে ইত্যাদি।

ছাত্ররা মানেনি, ফুঁসে উঠেছিল, রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ হয়। জাফর, কাঞ🌄্চন, জয়না🦩ল, দীপালি সাহাসহ নাম না জানা অসংখ্য সাথির মৃত্যুতে সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে— সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, একই পদ্ধতির শিক্ষা চাই। পরবর্তীকালে প্রণীত হয় ছাত্রসমাজের ঐতিহাসিক ১০ দফা।

১৪ ফেব্রুয়ারির চেতনার আলোয় যদি বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান শিক্ষা কমিশনগুলো যাচাই করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন প্রত্যাশার ব্যর্থতায় 𒐪দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে, তেমনি প্রতীজ্ঞাও কি দৃঢ় হয় না? যেমন ১. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন (১৯৭২), ২. জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি (১৯৭৬), ৩. জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি (১৯৭৮), ৪. মজিদ খান শিক্ষা কমিশন (১৯৮৩), ৫. মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন (১৯৮৭), ৬. শামসুল হক শিক্ষা কমিশন (১৯৯৭), ৭. এম এ বারী শিক্ষা কমিশন (২০০১), ৮. 🦩মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন (২০০৩), ৯. কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশন (২০০৯)—কোনোটিতেই কি ছাত্রসমাজের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে? ঘটেনি, তাই আন্দোলনও থামতে পারে না।

শাসকেরা ভুলিয়ে দিতে চায় সংগ্রামের ইতিহাস। ১৪ ফেব্রুয়ারি সে কারণেই যেন চাপা পড়া ইতিহাস। কিন্তু আগামী দিনে যারা শিক্ষা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়বে, তারা তো ইতিহাস বিস্মৃত হতে পা🌄রে না। তাদের কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি যেন ছাইচাপা আগুনের মতো, ভবিষ্যৎ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো। অতীত পেছন থেকে ঠেলে সামনে এগিয়ে নেয়। মধ্য ফেব্রুয়ারির স্মৃতিও তেমনি ভবিষ্যতের শক্তি হিসেবে প্রেরণা জোগাবে।

 

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Link copied!